ঘুম ভেঙে বাইরে চোখ মেললে ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখাটা শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের কাছে নতুন কিছু নয়। তা বলে জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকেও খালি চোখে তুষারধবল চুড়ো দেখা কি চাট্টিখানি ব্যাপার! কিন্তু ইদানীং তা-ও ঘটছে। আর এই দর্শনই আরও পর্যটক এনে দিতে পারে বন্ধ বিধ্বস্ত পাহাড়ে, মনে করছেন অনেকেই।
View of kanchanjangha Jalpaiguri station 😍😍😍😍😍😍😍😍😍😍 Pic:soumya |
এই হেমন্তে কেমন চলছে উত্তরবঙ্গের কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন? আকাশ পরিষ্কার থাকলে শিলিগুড়ি থেকে এই তুষারধবল শৃঙ্গ দর্শন খুব অভাবনীয় কিছু নয়। এ বার পুজোর পরে তা বারবার চোখেও পড়েছে। তার পরেই যেন সেই ছবি ছড়িয়ে পড়ল অন্যত্রও। কখনও কিষানগঞ্জ পেরিয়ে ধুমডাঙ্গির কাছে, কখনও ইসলামপুর থেকে, কখনও শিলিগুড়ি লাগোয়া সাহুডাঙ্গি, কখনও জলপাইগুড়ি শহর, মালবাজার বা ময়নাগুড়ি থেকে, কখনও আবার আলিপুরদুয়ার থেকে। ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরে সেই ছবি পৌঁছে যাচ্ছে সর্বত্র।
কেন সর্বত্র এত স্পষ্ট কাঞ্চনজঙ্ঘা? শিলিগুড়ির অনেকেই বলছেন, প্রতি বছরই অক্টোবরের শেষ দিকে উত্তর দিগন্ত জুড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা ভেসে ওঠে। বিশেষ করে পাহাড়ে গেলে তো দেখার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কিন্তু এ বার যে সমতলে এত দূর থেকে বারবার দেখা যাচ্ছে, তার সব থেকে কারণ, বন্ধের ফলে পাহাড়ে গাড়ির দূষণ ছিলই না বলতে গেলে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রাক্তন প্রধান সুবীর সরকার বলেন, ‘‘শীতের শুরুতে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণও অনেক কমে য়ায়। দৃশ্যমানতা কয়েক গুণ বাড়ে। তাই ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর শিলিগুড়ি থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরের রায়গঞ্জ থেকেও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গিয়েছে।’’ সে বারে বাংলাদেশের রংপুর থেকেও দেখা গিয়েছিল বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম এই শৃঙ্গ, যেমন এ বারে দেখা গিয়েছে ঠাকুরনগর থেকে।
ট্যুর অপারেটর সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘মাস দেড়েক আগে পর্যন্ত পাহাড়ে ছেয়ে ছিল বিমল গুরুঙ্গের হুঙ্কার, সরকারি বাংলোয় আগুন, লাঠি-গুলি, কাঁদানে গ্যাস আর বন্ধ। সে সব শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন এমন চমৎকার কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার টানে যদি আবার পাহাড়ে আসেন মানুষ, তা হলে ব্যবসার ক্ষতিপূরণও হয় কিছুটা!’’ এই টান উপেক্ষা করা কঠিন, বলছেন ন্যাফের কো-অর্ডিনেটর অনিমেষ বসুও। কাঞ্চনজঙ্ঘা বেসক্যাম্পে ট্রেক করে আসা অনিমেষবাবু বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ অত্যন্ত ভাগ্যবান, তাই খালি চোখে ঝকঝকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পান।’’
পাশাপাশি অবশ্য অন্য আলোচনাও চলেছে। সমতলের অনেকেই বলছেন, ‘‘বিমল গুরুঙ্গ লুকিয়ে আছেন, সেই সময়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা রোজ দেখা দিচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে, পাহাড়ে কে বেশি শক্তিশালী!’’
No comments:
Post a Comment